স্টাফ রিপোর্টারঃ চুয়াডাঙ্গা সদরের সাব রেজিষ্ট্রার ঘুষের টাকায় যশোর শহরের নীলগঞ্জে গড়েছেন পাহাড় সমান অট্টালিকা। ক্রয় করেছেন দুটি বিলাস বহুল প্রাইভেট কার ও অঢেল সম্পত্তি। আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সু-কৌশলে নিজের নামের পরিবর্তে পিতা-মাতার নামে খরিদ করেছেন এসব সম্পদ। ইতিমধ্যে এসব সম্পদের বৈধতা প্রমাণ করতে পিতা-মাতার নামে খুলেছেন আয়কর ফাইল। গত ১৫ অক্টোবর এলাকাবাসীর পক্ষে দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো গণস্বাক্ষরিত এক অভিযোগ থেকে এতথ্য পাওয়া গেছে। এলাকায় অনুসন্ধানকালেও একাধিক সূত্র এতথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর শহরের নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়ার গোলাম মোস্তফা মহুরীর পুত্র গোলাম মোর্তজা লিটন ৯/১০ বছর আগে সাব রেজিষ্ট্রার পদে চাকুরী পান। তখন নীলগঞ্জে তার পিতা গোলাম মোস্তফার একটি জরাজীর্ণ একতলা বাড়ি ছিলো। সাব রেজিষ্ট্রার পদে গোলাম মোর্তজা লিটন চাকুরী পাওয়ার পর বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। মাত্র ৯/১০ বছরে সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্তজা বেনামে গড়েছেন প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ। তিনি যশোর শহরের নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়ায় প্রায় ১৫ শতক জমি ক্রয় করে সেখানে বহুতলা বিশিষ্ট পাঁচতলা লন্ডন স্টাইলের বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্প্রতি শেষ করেছেন। এর আগে পিতা গোলাম মোস্তফা মহুরীর পুরাতন বাড়িটি ভেঙ্গে একটি আধুনিক ডিজাইনের দুইতলা বাড়ি নির্মাণ করেন সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্তজা লিটন।
এছাড়া যশোর-নড়াইল সড়ক লাগোয়া নীলগঞ্জ ডুসেক স্কুলের সামনে, বকচর হুশতলায়, যশোর-খুলনা মহাসড়ক লাগোয়া রাজারহাট, সীতারামপুর, কঁচুয়া নিমতলী ও বলাডাঙ্গা কাজীপুরে রয়েছে প্রায় ৩০/৪০ বিঘা সম্পত্তি। সূত্রমতে, বর্তমান বাজার অনুযায়ী উল্লেখিত বাড়ি, গাড়ি ও সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্তজা লিটনের পিতা গোলাম মোস্তফা একজন পেশাদার দলিল লেখক হওয়ায় আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য এসব সম্পত্তি খরিদ করার সময় প্রকৃত মূল্য গোপন করে আন্ডার ভ্যালু দলিল সম্পন্ন করেন। শুধু তাই নয়, দুদকের চোখ এড়াতেও এসব চালাকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসির দাবি। তাছাড়া সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্তজা লিটন নিজেকে রক্ষার জন্য অত্যান্ত কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে বেনামে খরিদ করেছেন দুটি বিলাস বহুল প্রাইভেট কার। যার রেজিঃ নম্বর- চট্টো মেট্টো-গ ১১-৫২৫০ ও ঢাকা মেট্টো-খ ১১-৮৫৮২। গাড়ি দুটির একটি ব্যবহার করেন সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্তজা লিটন ও অপরটি ঘুষের টাকা বহনে ব্যবহার করেন তার পিতা গোলাম মোস্তফা মহুরী। সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্তজা লিটন মাগুরা দুই উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন। তখন তিনি কাড়ি কাড়ি ঘুষের টাকা আয় করেছেন। ঐ সময় প্রতি বৃহস্পতিবার গোলাম মোস্তফা মহুরী প্রাইভেট কার নিয়ে চলে যেতেন মাগুরা। সন্ধ্যার পর ঘুষের টাকা নিয়ে তিনি যশোরে ফিরতেন। দুদকের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিজের গাড়ি বাদ দিয়ে ঘুষের টাকা পিতার গাড়িতে পাঠানো হতো। এভাবে ধুরন্ধর সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্তজা লিটন জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ গড়েছেন পিতা—মাতা ও আত্মীয়—স্বজনের নামে। এব্যাপারে সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্তজা লিটনের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার ০১৭১২-০০৯০৯০ নম্বর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এদিকে এব্যাপারে তার পিতা গোলাম মোস্তফা মহুরীর ০১৭১২-৬৮০১০২ নম্বর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান আমার ছেলে লিটনের নামে কোনো সম্পদ নেই। সব কিছুই আমার ও আমার স্ত্রীর নামে কেনা। আমাদের দুজনের নামে আয়কর ফাইল খুলেছি। কাজেই আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কোথায় পেলেন এতো সম্পদ, এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি গোলাম মোস্তফা মহুরী।
এলাকাবাসী এ ব্যাপারে দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।