নিজস্ব প্রতিবেদক|| মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়িতে গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাহিরে বলে অভিযোগ উঠেছে সিটি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার এক উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। ঠিক কত টাকা নিয়ে তিনি ধরাছোঁয়ার বাহিরে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) থেকে উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখাটিতে গ্রাহকরা গিয়ে নিজেদের অর্থ উত্তোলন করতে চাইলে টাকা উত্তোলন করতে না পারায় গ্রাহকরা বিপাকে পড়েছেন। তারা এজেন্ট মোঃ ফরমান দেওয়ানকে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী বলছে, সিটি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট মালিক ফরমান দেওয়ানকে প্রায় তিনমাস যাবত ঠিকমক ব্যাংকে আসতে দেখা যায় না। বাজারের লোকজন জানান, এজেন্ট ব্যাংকিং হলেও এখানে সাধারণ ব্যাংকের মতো সবধরনের কার্যক্রম চালু ছিল। গ্রাহকদের অতি লভ্যাংশের ফাঁদে ফেলে- স্টাম্প ও চেক এর মাধ্যমে গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে কয়েককোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ এজেন্ট ফরমান দেওয়ান। এইলোকের কারণে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা উঠে গেছে।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে বালিগাঁও গ্রামের মৃত ছামাদ দেওয়ান’র ছেলে মোঃ ফরমান দেওয়ান বালিগাঁও বাজারের বিসমিল্লাহ্ প্লাজা মার্কেটের ২য় তলায় সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু করেন। নিজেই হয়েছেন এ এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের ম্যানেজার।
বিসমিল্লাহ্ মার্কেটের ব্যবসায়ী দোকানদার (পরিচয় দিতে অনিচ্ছুক) বলেন, সিটি ব্যাংক দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক। এই বালিগাঁও এজেন্ট শাখাটি প্রথম দিকে ভালোই চলছিল। কিন্তু ম্যানেজার লোভে পরে মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এখন সে ঠিকমত টাকা দিতে পারছে না। আমার মনে হয় এই এজেন্ট শাখাটির এজেন্ট পরিবর্তন করে অন্য কাউকে এজেন্টের দ্বায়িত্ব দেওয়া উচিত। এমন ভাবে চলতে থাকলে এই ব্যাংকের সুনাম ধুলোয় মিশে যাবে।
এমন শতাধিক গ্রাহক টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের সবাইকে একটি করে চেক দিয়েছেন ফরমান দেওয়ান। ভুক্তভোগীদের দাবি, প্রতি মাসে তারা লাখে দুই হাজার টাকা করে সুদ পেতেন। কিন্তু হঠাৎ করে সেটিও দেয়া বন্ধ করে দেন এ এজেন্ট উদ্যাক্তা ফরমান দেওয়ান।
ফরমান দেওয়া এর ঘনিষ্ঠ্য একটি সুত্র জানাযায়, সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ডিভিশন তার পার্সপোর্ট আটকে রেখেছে যাতে পালিয়ে দেশের বাহিরে যেতে না পারে। তবে তাকে তার ভুল সুদ্রাবার সুযোগ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি পার্সপোর্ট হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডি করে পুনরায় পার্সপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তিনি যে কোনো সময় দেশের বাহিরে পালিয়ে যেতো পারে বলেও গুঞ্জন উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ও ম্যানেজার ফরমান দেওয়ান গ্রামের সাধারণ মানুষ ও প্রবাসীর পরিবারের লোকজনকে টার্গেট করে বলতেন, ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলে লাভ্যাংশ কম হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে টাকা না রেখে তার কথামতো রাখলে লাখ প্রতিমাসে হাজার টাকা লাভ পাওয়া যাবে। আর এ লোভে পড়েই লোকজন টাকা দিয়েছে তাকে। অভিযুক্ত এজেন্ট ও ম্যানেজার ফরমান দেওয়ান গ্রাহকদের জমা দেওয়া লাখ লাখ টাকার বিপরীতে লভ্যাংশ বা সুদ বাবদ প্রতিমাসে নির্ধারিত টাকাও অনেকদিন ধরে পরিশোধ করে আসছিলেন। জমার রশিদ না দিয়ে টাকা জমা নিয়ে একটি চেক ধরিয়ে দিতেন গ্রাহকদের এবং লাভের অংশ পরিশোধ করে আসছিলেন তিনি। ভালো আচরণ ও সঠিক লেনদেন করে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেন। ফলে এলাকার লোকজন বিশ্বাস করতেন তাকে। আর এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন তিনি।
এবিষয়ে আরিফ মোল্লা নামের একজন বলেন, ফরমান দেওয়ান আমার বন্ধু মানুষ, সে সিটি ব্যাংক বালিগাঁও এজেন্টের মালিক ও ম্যানেজার। গত ১০ জুন ১ লাখ এবং ৫ জুলাই ৫০ হাজার টাকা ধারন(হাওলাত) নেয়। দুই বারে দেড় লাখ টাকা ১ মাসের কথা বলে হাওলাত নিয়েছে। দেই দিচ্ছি বলে টাকাটা আর ফেরত দিচ্ছে না। টাকা চাইতে গেলে প্রাণনাসের হুকমি ধামকি দিচ্ছে। তাকে আমি বিশ্বাস করতাম। কিন্তু এখন শুনি শুধু আমিই না ব্যাংকের গ্রাহকদের লোভের ফাদেঁ ফেলে প্রতারণা করেছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা নিব। সে একজন প্রতারক। কেউ তার সাথে ব্যক্তিগত লেনদেন করবেন না। এবিষয়ে আমি গত ১৩ নভেম্বর টঙ্গিবাড়ি থানায় জিডি করেছি। যার জিডি নং- ৫৬২। বন্ধু হিসেবে টাকা ধার)হাওলাত) দিয়েছি কোনো প্রমাণ রাখা ছাড়াই।
এদিকে অভিযুক্ত ফরমান দেওয়ানের সাথে মুফোফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তা সম্ভব হয়নি।