দুরে কেন? মনের দুয়ারে এসো– পর্ব-০১ কলমে- এস এম মারুফ বিল্লাহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

************** কিছু কথা **************

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা সকলের প্রতি রহিল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু না কিছু আশা-আকাঙ্খা থাকে। ঐ বিধাতা মানুষের জীবনে সুখ ও দুঃখটাকে দুইটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন। কারণ দুঃখ না থাকলে কখনো সুখের স্বাদ পাওয়া যায় না।

প্রেম-ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের জীবনে আসে, আসবেই। কারণ এটা যে বিধাতার দেওয়া আর আমাদের পরম পাওয়া। কিন্তু কারো সেটা স্থায়ী আর কারো ক্ষণস্থায়ী। প্রেমের মর্ম কেউ সহজে উপলব্ধি করতে পারে কেউ অবুঝ বনে মুখটি ঢাকে।

তারপরও মানুষ কল্পনা করে। কল্পনা মনের বিলাশ। কল্পনা রঙিন স্বপ্ন রচনা করতে শেখায়। কিন্তু অনেক সময় বাস্তবতার কঠিন আঘাতে স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যায়। এরপরও মানুষ স্বপ্ন দেখে। কারণ স্বপ্ন জাগ্রত আশার ভেলা। আর ঠিক তেমনি আমার দ্বিতীয় “দুরে কেন ? মনের দুয়ারে এসো” উপন্যাসটি। বন্ধু এমন একটি শব্দ যার অর্থ বোঝার ক্ষমতা সবার থাকে না। বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হলে- একজনের প্রতি অন্য জনের আস্থা থাকতে হবে অটুট। বন্ধুত্বের বন্ধন হতে হবে স্বার্থত্যাগী। বন্ধুত্বের মধ্যে এমন এক সেতু বন্ধন থাকতে হবে যেন উড়ো আওয়াজে আর ঝড়ু হাওয়ায় পরস্পরের মধ্যে ছিন্ন না হয়। হতে হবে অস্ত্রের মতো ধারালো আর নিরস্ত্রের মতো আত্মবিশ্বাস।

অবশেষে বলবো, আমার লেখা পড়ে যদি কারো দু’চোখে অতিত স্মৃতি ভেসে ওঠে, মনের মনি কোঁঠায় যদি কষ্ট জন্ম নেয়, তাহলে ক্ষমাকে বন্ধু ভেবে আমাকে ক্ষমা করবেন। আর ভালো লাগলে আপনাদের ভালোবাসা থেকে দুরে কেন মনের দুয়ারে ধরে রাখুন। আপনাদের ভালোবাসা আমার এগিয়ে চলার প্রেরণা।

 

ধন্যবাদ জানাই-

দক্ষিণ অঞ্চলের ইসলামিক সু-স্পষ্টবাদী বক্তা যে আমার দ্বিতীয় উপন্যাসটি লিখতে সর্বদা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেই শ্রদ্ধেয় মাওলানা মোঃ লুৎফর রহমান সাহেব’কে। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাই আমার কাছের ও দুরের সকল বন্ধুদের। যারা সর্বদা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে। যারা নিজের সুখ অন্যের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে নিজেকে সুখি মনে করে। তাই আজ বাঁধনে বেঁধে বলবো “দুরে কেন ? মনের দুয়ারে এসো”।

                        “দুরে কেন? মনের দুয়ারে এসো” পর্ব- ০১

ভোরের উদিত রক্তিম সূর্য, শিউলি ফুলের মন মুগ্ধকর সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিক। শীতের কুয়াশাচ্ছন্নতার কারণে দু’চোখের দৃষ্টি বেশি দুরে ঠাঁই মিলছে না। আজ যেন সমস্ত কুয়াশা মরিচিকার আবরণেন মতো সারা পৃথিবীটাই ঘিরে আছে। যা দীর্ঘস্থায়ী নয়। সময়ের সাথে সাথে বদল ঘটবে তার নিজেস্ব আবির্ভাব। কিন্তু ভোরের হীমেল কুয়াশা যতোটা নির্মম আবার ততোটাই সুখকর।

অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে যেমন কোন কোন গাছের কুঁড়ি ফুল হয়ে ফুটবার আগে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি অনেক সুখহীন কুঁড়ি ফিরে পাই ফুল হয়ে ফুটবার আনন্দ মুখর প্রেরণা। শিশির ভেঁজা হীম ঘাস জীবনে পূর্ণতা তুলে ধরে সুখকর যৌবনের অভিজ্ঞতা।

ভোর হলো পবিত্র সু-মধুর আযানের ধ্বনী পৌছে গেছে প্রতিটি বাড়ির আঙিনায়। জগতের নিয়মে প্রতিদিন যখন ভোরের সু-মধুর আযানের ধ্বণী সুদ্বীপ্তর বাড়ির আঙিনায় এসে ঘুমন্ত প্রাণটাকে জাগিয়ে তোলে, তখন সুদ্বীপ্তর বাবা জনাব জামান সাহেব ছেলে-মেয়েদের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একে একেডেকে তোলেন নামাজের জন্য।

সুদ্বীপ্তর মায়ের ঘুম একটু বেশি। আর সে কারণে ছেলে-মেয়েদের ডেকে উঠানোর দায়িত্ব জামান সাহেব নিজেই নিয়েছেন। জামান সাহেব এ এলাকার একজন সু-পরিচিত সু-সম্মানিত আদর্শবান ব্যক্তি। তার সততার কারণে আ অর্থ সীমিত, কিন্তু আত্ম সম্মান আছে অনেক। যদিও এ যুগে মানুষের মাঝে খুজে পাওয়া বড়ই দুরাহ।

আযানের সময় হয়ে এলো। কিন্তু কই জামান সাহেব? কই তার সু-মিষ্টি কন্ঠস্বর? মায়ের মতো সুদ্বীপ্তর ঘুম একটু বেশি হলেও আজ আযানের পবিত্র ধ্বণি কাজে বেজে ওঠার আগেই ঘুম ভেঙে গেছে। কিছুতেই যেন ঘুম আসছে না। কিসের যেন একটা ধাক্কা খেলছে বুকের ভেতর। ঘুম ঠিকমতো না হওয়াতে হয়তো। আযান দিবে দিবে কিন্তু বাবাতো এখনো ডাকতে এলো না। নিশ্চই অনেক রাত জেগে পবিত্র কুরআন পড়েছেন। আর সেই কারণেই হয়তো ঘুম মশাই তার চিন্তামুক্ত ঘুমের মায়াজালে আটকে ফেলেছে। সুদ্বীপ্ত যে বাবাকে ডেকে তুলবে তা আর হচ্ছে না। আজ যেন অন্য দিনের চেয়ে ভোরের আলিস্যময় সময় তাকে তার ব্যাড়াজালে আঁকড়ে ধরেছে। মাঝে মাঝে সুদ্বীপ্তর মন বলছে, বাবাকে নামাজের জন্য ডেকে দিই। আবার আলিস্যময় শক্তিতে হার মেনে ভাবলো, না আর একটু ঘুমিয়ে নেই। কিছু মসয় যেতেই মোয়াজ্জিনের কন্ঠে ভোরের সু-মধুর আযানের ধ্বণি ভেসে এলো। সুদ্বীপ্তও হারিয়ে গেল গভীর ঘুমে। হঠাৎ মমতাময়ী মায়ের আত্মচিৎকারে কেঁপে উঠলো সমস্ত বাড়িঘর।অস্পস্ট কন্ঠে ভেসে এলো- সুদ্বীপ্ত, তীর্ণ ওরে কে কোথায় আছিস? জলদি আয়। তোদের বাবা নামাজের জন্য উঠছে না। আমার ডাকে সাড়া নদিচ্ছে না। মায়ের এমন বুকভাটা আর্তনাদ কানে আসতেই সুদ্বীপ্ত দ্রুত বাবা-মায়ের ঘরের দিকে যাবার জন্য পা বাড়ালো। দ্রুত যেতে দরজায় বেশ আঘাত পেল সুদ্বীপ্ত। আঘাতকে আঘাত না ভেবে মায়ের ঘরে বাবার পাশে বসে বাবাকে ডাকতে লাগলো- বাবা ও বাবা কি হলো তোমার! উঠছো না কেন? ওঠ বাবা নামাজের সময় হয়ে গেছে। বাবার মুখে কথা নেই। সুদ্বীপ্ত আবারো ডাকতে লাগলো, কি হলো বাবা? আমাদের উপর অভিমান করে আছো বুঝি! নামাজের সময় আর অভিমাণ করে থেকো না বাবা। ওঠ বাবা ওঠ। বলতে বলতে সুদ্বীপ্তর দু’চোখে শিশিরের মতো কোমল বিন্দু বিন্দু অশ্রু দু’গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। সুদ্বীপ্ত বাবার হাতটি ধরলো। রক্ত বরফের মতো হীম হয়ে গেছে। অনেকটা ভয় পেয়ে গেল সুদ্বীপ্ত। তবে কি বাবা আর নেই। বাবার প্রাণ পাখিটি কি তাহলে উড়াল দিয়েছে অজানা ঠিকানায়। তবে আর কি ফিরবেনা, দোয়া ভরা দুটি হাত রাখবেনা আমাদের মাথায়। আর্শীবাদের ছায়া হয়ে থাকবেনা মাথার উপর। শাসনের নামে কি আর দরদ দেখাবেনা আর কোনদিন। কথা কি বলবে না কারো সাথে। না না তা হতে পারে না। এমনটি হলে এ পরিবার তা সহজে মেনে নিতে পারবেনা। সুদ্বীপ্ত বাবার কোমল বুকে মাথা রেখে বুঝলো তাদের বাবার আত্মার মৃত্যু ঘটেছে। বাবা আমাদের ছেড়ে ব্যস্ত হয়েছে শীতল আঁধারে ঢাকা গহীন মাটির ছোট্ট ঘরের বাসিন্দা হতে। সুদ্বীপ্ত মায়ের দিকে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে বললো, মা আমাদের বাবা আর আমাদের সাথে কথা বলবে না, হাসবেনা, কাছে ডাকবে না কোনদিন। মাগো বাবা এমনটি কেন করলো? আমাদের কাউকে কিছু না বলে এভাবে একা মৃত্যুকে কাছে ডেকে নিল। কেন মা কেন? আমার বাবার তো এখনো সে বয়স হয়নি যে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। তবে কেন বাবা চিরদিনের মতো এ দুনিয়া থেকে, আমাদের কাউকে কিছু না বলে এভাবে চলে গেল? মিসেস জামান ছেলের কথাগুলো শুনে ঘুনে ধরা কাঠের মতো ঘরের ফ্লোরে পড়ে গেলেন। একি হলো? তবে কি জামান সাহেবের মতো মিসেস জামানও কি নীরবে বিদায় নিলেন এই ধরণীর বুক থেকে! না তা হতে পারে না।বাবা চলে গেলেন, বাবার সাথে স্নেহময়ী জননীও পারে না সন্তানদের প্রতি মায়ের স্নেহ, আদর মায়া-মমতা ভালোবাসা বঞ্চিত করে এভাবে চলে যেতে। উপর বিধাতা এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে না। সুদ্বীপ্ত স্নেহময়ী মাকে বাবার পাশে রেখে ছোট বোন তীর্ণকে বরলো, তীর্ণ জলদি পানি নিয়ে আয়।

তীর্ণ দ্রুত ভাইয়ার হাতে পানির জগটা দিয়ে গেটের বাহিরে এসে ডাকতে লাগলো- মতিন চাচা- চাচি, রাহেলা চাচি, ডাক্তার চাচা-চাচি তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। আমার বাবা আর বেঁচে নাই। আম্মুও যেন কেমন করছে। তাড়াতাড়ি এসো তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। তীর্ণর ভয় ভয় ভারী কান্নাচ্ছন্ন কন্ঠ শুনে সবাই জামান সাহেবের বাড়িতে ভিড় জমাতে লাগলো।

এখানেই শেষ নয়…….  ধারাবাহিক ভাবে প্রতিটি পর্ব পেতে চোখ রাখুন “সমাজের চোখ” এর সাহিত্য পাতায়।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ