বেনাপোল বন্দরে যত্রতত্র পার্কিং, জ্যামে নাকাল জনজীবন, মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

এস এম মারুফ, ক্রাইম রিপোর্টারঃ দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দরে প্রতিদিনই বাড়ছে যানবাহন। ফলে সড়কের উভয়পাশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এখন নিয়মিত দৃশ্য। বেনাপোল পৌরসভা যানজট নিরাসনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে করে ট্রাক ও বাস টার্মিনাল করলেও বাস ও ট্রাকগুলো মহাসড়কে কোথাও এক সারি আবার কোথাও দুই সারি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সারা বছরই লেগে থাকে অসহনীয় যানজট। যানজটের প্রধান কারণ দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থপনা বলে দায়ি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর এই যানজটের কারণে  আটকা পড়ে নষ্ট হয় মূল্যবান কর্মঘন্টা। সেই সাথে অতিষ্ট হয়ে উঠছে জনজীবন।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরের প্রধান সড়কগুলোতে যত্রতত্র পার্কিং ঠেকাতে নাজুক ট্রাফিক ব্যবস্থা। সড়কের একটি জায়গায় ছাড়া আর কোথাও নেই ট্রাফিক পুলিশের আনাগোনা। আর এই সুযোগে বেনাপোলের প্রধান সড়কটির ২ কিলোমিটার জুড়ে প্রতিনিয়ত রাখা হচ্ছে শত শত ট্রাক। স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ও এলাকার সাধারণ মানুষেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে। বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানী ট্রাকে এর আগেও সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে বড় আঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এক শিশু শিক্ষার্থী, চেকপোস্ট আনসার ক্যাম্পের পাশে লোকমান নামে সাংবাদিক ও সি এন্ড এফ ব্যবসায়ী, একই জায়গায় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী জিন্নাত আলী, ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী আরিফাসহ একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন প্রকার নজরদারি করছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকার একাধিক ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, টার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও সড়কের উপরে বাস ট্রাক রেখে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি করছে একটি মহল। দীর্ঘদিনের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বন্দরটি চললেও কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। প্রধান সড়কে প্রতিদিনের এ তীব্র যানজটের পরিত্রান চান তারা। যাতে আমাদের কমলমতি শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে।

স্থানীয় অনেকে বলেন, প্রধান সড়কের ফুটপাতগুলোও দখল করে আছে এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী। এতে মানুষের চলাচলসহ বাস ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। সব মিলে এলাকাবাসির জীবনে বিষফোঁড়া হয়ে উঠ্ছে। তাই ফুটপাত দখলমুক্ত ও পৌর টামিনাল গুলো সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করা হলে এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পাশাপাশি যানজট থেকে স্বস্তি মিলবে।

 

বেনাপোল চেকপোস্টের বিশিষ্ঠ্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সাংবাদিক আবুল বাশার বলেন, যানজট এখন এই শহরের বড় সমস্যা। বেনাপোল চেকপোস্ট আনসার ক্যাম্পের সামনে থেকে শুরু হয় যানজট, বেনাপোল বাজার পর্যন্ত একই অবস্থা। এ রোডে ইচ্ছেমতো এলামেলো ভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। চালকের খেয়ালখুশি মতো গাড়ি চালায়। কে কার আগে যাবে, গাড়িগুলোর ওই প্রতিযোগীতায় থাকে। সড়কের উপর সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলোও যে যার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এসব দেখেও প্রশাসন কিছু বলেনা। কারও কিছু বলার নেই। আসার সময়ও একই অবস্থা। যানজটের কারণে এক রকম স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এছাড়াও এ বন্দরের সাথে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় দেশের সিংহভাগ পাসপোর্ট যাত্রী এপথেই যাতায়াত করে থাকেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মেডিকেল ভিসা। আর প্রচন্ড এই যানজটের কারণে পাসপোর্ট যাত্রীসহ এ এলাকার মানুষগুলো জরুরি কাজ ও অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবার জন্য স্থানীয় ক্লিনীক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে দীর্ঘসময় যানজটে থাকতে হয়। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা জরুরি।

 

সচেতন মহল বলেন, বেনাপোল থেকে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পান। কিন্তু বেনাপোলবাসি কি পান? এখানে নেই ভালোমানের চিকিৎসা সেবা, নেই ভালোমানের হসপিটাল, যানজট নিরাষণে নেই উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থা। সুবিধাবঞ্চিত বেনাপোলবাসিদের সুবিধা গুলোর প্রতিও সরকার ও স্থানীয় সরকারী প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন। একটি পণ্যবাহী ট্রাকের যদি ৪/৫ ঘন্টা অলস সময় কেটে যায় তখন দিন শেষে এর মূল্য দিতে হবে ভোক্তাদের। কারণ এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। তাই এ বন্দরের সমস্যাগুলো সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, নইলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব নাসির উদ্দীন বলেন, আমরা জন্মকাল থেকেই এই ট্রাফিক জ্যামে ভুগছি। কিন্তু আজো এর সমাধান হয়নি। আমরা এলাকাবাসি এর ভুক্তভোগী। এছাড়াও বড় আঁচড়া এমপি মার্কেটের সামনেও সব সময় যানজট লেগে থাকে। আর এই যানজট নিরাষণে আমি ও আমার পৌরসভা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে ইজিবাইকগুলো একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। মহাসড়কে যানজট মুক্ত রাখতে ও সাধারণ মানুষের যানজট কষ্ট দুর করতে বাসগুলো বাস টার্মিনালে ও ট্রাকগুলো ট্রাক টার্মিনালে নেওয়ার চেষ্টা করছি। গত ৪ দিন আগের টার্মিনাল আর বর্তমানের টার্মিনালের মধ্যে অনেক ভিন্ন। টার্মিনাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে, পরিবহন ও ট্রাকগুলো পরিস্কার করানোর জন্য সার্ভিসিং সেন্টার করা হয়েছে। এবং টার্মিনাল পরিপূর্ণ করতে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ কারার বেনাপোল পৌরসভা তা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পরিবহন টার্মিনালে কাউন্টার অফিস নিয়েছেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো চালু করবো। এরপর ফুটপাতটাও দখলমুক্ত করা হবে বলেও তিনি জানান।

নিরাপদ সড়কে স্বস্তি ফিরে আসুক বেনাপোলে, এমনটাই জোরালো দাবী সচেতন পৌর নাগরিকদের।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ