কোচিং বাণিজ্য আর যৌন হয়রানী, কে রুখবে এই দানবদের?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

এম রাসেল সরকার: ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজে চোখ বুলাতেই চোখে পড়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন, যৌন হয়রানির ও ধর্ষণের খবর! এ যেন রুটিন কাজে পরিনত। কে রুখবে এই দানবদের? প্রতিষ্ঠানে দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এই দানবদের দানবীয় কর্মকান্ড।
প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিংকমিটির প্রধান, থানা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সবাই গা-ছাড়া ভাব কেউ কিছুই জানে না। কথায় আছে কেউ অপকর্ম করে মজা পায়, আবার কেউ অপকর্ম দেখে মজা পায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চলছে এমনই এক অবস্থা। এবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার আলোকপাত করি।
সম্প্রতি রাজধানীতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনায় চারিদিকে বিরাজ করছে এক আতংক। প্রতিষ্ঠানটির আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকার। এই শিক্ষক কোচিং করানোর সময় ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করতেন। তার লালসার স্বীকার ১৯ জন শিক্ষার্থী অভিযোগ দিয়েছেন।
তার শাস্তি ও পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখায় বিক্ষোভ করেছেন। অভিভাবকদের অভিযোগ গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন বছরের পর বছর ধরে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছিল। যত দ্রুত সম্ভব এই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা। সোমবার এক ছাত্রী মামলা করলে সেই মামলায় আটক হয়ে রিমান্ডে আছে মুরদ হোসেন সরকার। তিনি একজন মাষ্টার ট্রেনার এবং সর্বজন স্বীকৃত কোচিংবাজ শিক্ষক।
এর আগে ২০১১ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বাংলার এক শিক্ষক কোচিং করানোর সময় এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। সাড়া জাগানো ঐ ঘটনায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ঐ শিক্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পরিমল জয়ধর স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে কোচিং করানোর সময় ঐ ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে প্রথম ধর্ষণ করেন ২০১১ সালের ২৮ মে। সে সময়ের ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণা করা হয়েছিল। অল্প কিছুদিন পর সেই ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে আবারও ধর্ষণ করেন। এছাড়া ভিকারুন নিসার বসুন্ধরা শাখার নবম শ্রেণির দিবা শাখার এক ছাত্রী ঐ শাখার  ইংরেজি শিক্ষক আবু সুফিয়ানের কাছে প্রাইভেট পড়ত। প্রাইভেট পড়ানোর ফাঁকে ঐ শিক্ষক বিভিন্ন সময় ছাত্রীকে অশালীন এসএমএস পাঠাতেন। যেগুলো খুবই আপত্তিকর ও সম্মানহানিকর। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন ছাত্রীর অভিভাবক।
বিষয়টি প্রমাণ পাবার পর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর আবু সুফিয়ান নামে ইংরেজির ঐ শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সর্বশেষ ঘটনাটি চলতি সপ্তাহের মুরাদ হোসেনের। অভিযোগ আছে কোচিং সেন্টারে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনেই যৌন হয়রানির সুযোগ নেয় এসব শিক্ষকেরা।
রাজধানীর নামকরা আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ফাদে ফেলে ২০১৩ সালে বিয়ে করে পালিয়ে যায় ইংরেজির শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ জুয়েল রেজা। ঐ প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন ২০২০ সালে এক ছাত্রকে বেধড়ক পিটালে সেই ভিডিও ভাইরাল হলে নাসির উদ্দিন বহিষ্কার হয়। নাসির উদ্দিনের চাকরি চলে যায়। চাকরি ফিরে পেতে দারে দারে ঘোরে এবং দেনদরবার করে চাকরি ফিরে পায়।
রাজধানীর নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ে করে আলোচনায় আসেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ। ৬০ বছর বয়সি মুশতাক এর আগেও দুটি বিয়ে করেছেন। তার সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ে মেনে নিতে পারেনি মেয়েটির পরিবার। তাদের অভিযোগ, মেয়েকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছেন মুশতাক আহমেদ।
অসমবয়সি দুজনের এই প্রেম ও বিয়ের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। মুশতাকের বিরুদ্ধে মেয়েকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলার আবেদন করেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা। সেই মামলায় মুশতাকের সঙ্গে কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকেও আসামি করা হয়।
স্কুল-কলেজ ছাড়াও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ঘটনা আরও বেশি ঘটছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সবাই। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগে বাধ্যতামূলক তিন মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির মামলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতারের কথা সবার জানা ।অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের নাম ননী গোপাল হালদার (৫২)। তিনি বটতলা চন্দনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
ঐসময় ঘটনাটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার বটতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।ভিকটিম চন্দনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। বিভিন্ন সময় প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল হালদার তার শরীরের স্পর্শকতর স্থানে হাত দেওয়া ও শ্লীলতাহানি করেছেন। শুধু ওই শিক্ষার্থী নয়, আরও কয়েক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও একই আচরণ করেছেন ওই শিক্ষক শরীয়তপুর পৌরসভার দাসার্ত্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রীদের যৌন হয়রানির কথায় সবার জানা।
ঘটনাটি ঐ সময় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছু শিক্ষার্থীরা তার লালসার শিকার হয়েছিলো।
কুমিল্লা হাই স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক শাহনেওয়াজ বাহার পর্নোগ্রাফি মামলায় দীর্ঘদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর অপপ্রচার চালিয়ে বিপর্যস্ত করে তুলেছে মামলার বাদী স্কুলছাত্রী ও তার পারিবারিক জীবন।মামলা নং ০১/১/৪/২০২২ কুমিল্লা সদর থানা। এঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করার কারণে সাংবাদিক রাসেলের বিরুদ্ধেও মনগড়া অপপ্রচার চালিয়ে আসছে এই অপরাধী। কম্পিউটারে বিভিন্ন ছবি এডিট করে একটার সাথে আরেকটা জোড়া লাগিয়ে ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার চাপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। মামলা করে মহাবিপদে পড়ে গেছে ভুক্তভোগি স্কুল ছাত্রীর পরিবার।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর কুমিল্লা নগরীর মডেল হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে শারীরিক সর্ম্পক স্থাপন করেন ওই স্কুলের খন্ডকালীন শিক্ষক শাহনেওয়াজ বাহার। শিক্ষার্থীদের এসব আপত্তিকর দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ দিন কারাগারে থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন। এঘটনায় সহযোগিতা করার দায়ের শিক্ষক বাহারের বাবা ওই স্কুলেরই অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল কাদেরও জেল খাটেন। জানা গেছে, ১৬ এপ্রিল-২০২৩ দিবাগত রাতে নারী শিশু নিযার্তন ও পর্নোগ্রাফি মামলায় জেলার লালমাই উপজেলার রসলপুর এলাকা থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে কোতায়ালী মডেল থানা পুলিশ।
১৭ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করা হলে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলার প্রধান আসামি কুমিল্লার লালমাই উপজেলাধীন রসলপুর গ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল কাদের ছেলে মো. শাহনেওয়াজ বাহার (৪০)। তার বিরুদ্ধে অর্থ জালিয়াতি ও প্রতারণার ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিয়ে ও যৌন হয়রানি সহ একাধিক মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর এক স্কুল ছাত্রীকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়ে প্রথমে ধর্ষণ অতঃপর বিয়ে এই মামলায় সে কারা ভোগ করছেন।
চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার বিষয়টা ছিলো টক অব দ্যা চট্টগ্রাম। নগরীর বন্দর থানার কলসীদিঘীর পাড় বাদামতলা এলাকার একটি মাদ্রাসায় এ ঘটনা। গ্রেপ্তার শিক্ষকের নাম ওমর ফারুক (২১)। তার বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নে। তিনি মারকাজুল হুফফাজ মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষক।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, যৌন নিপীড়নের শিকার ৯০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেন না। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন রোধে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র’ রয়েছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকার ছাত্রী বা নারী শিক্ষকরা সেখানে অভিযোগ দিতে চান না। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হলে বা ক্ষমতাসীন দলের হলে সেল বিচারে গড়িমসি করে। লোকলজ্জা, সামাজিক চাপও বড় বাধা। গবেষণা প্রতিবেদনের এসব পরিসংখ্যান দেখে হোচট খেতে হয়। ঘটনার একটু গভীরে গেলেই তা উপলব্ধি করা যায়।
মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে দাবি করে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়। অভিযুক্তের পক্ষেও অনেকে হুমকি দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তুলে নেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর  বলেন, মেয়েরা হয়রানির শিকার হলেও তা সহজে সামনে আনতে চায় না। আবার অনেকভাবেই তা ধামাচাপা দেওয়া হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে না। যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন একটা ভাবমূর্তি দাঁড় করাতে পারে যে, সব অভিযোগের ক্ষেত্রেই জিরো টলারেন্স; তা হলে হয়তো অনেকে অভিযোগ দিতে সাহসী হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরের (বশেমুরবিপ্রবিপি) উপাচার্য ও মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন অভিমত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ নজরদারি থাকা প্রয়োজন। এ ধরনের যৌন আচরণকে সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারের সঙ্গে তুলনা করে অধ্যাপক সাইফুদ্দিন বলেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোকে কমানো সম্ভব। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিশেষ কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
শিক্ষক কর্মচারি ঐক্য জোটের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুইয়া বলেন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যৌন আচরণ ও হয়রানির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক মূল্যবোধ মেনে চলতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করতে সমাজের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডকে প্রশয় না দিয়ে আইনের সাহায্য নিয়ে আইনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ প্রতিরোধ করবে।
ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি রোধ করতে সমাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে, এলাকায় যৌন হয়রানির বা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে করে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হ্রাস পাবে।
সন্তানের আচরণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাদের কথা গুরুত্বসহকারে শোনা। গুড টাচ-ব্যাড টাচ সম্পর্কে তাদের অবগত করতে হবে। তাদের বয়ঃসন্ধি বা দেহের স্পর্শকাতর অঙ্গ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি যেমন মা-বাবা ছাড়া অন্য কারও স্পর্শ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সন্তানকে মন খুলে কথা বলতে শেখাতে হবে এবং তাদের ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সাহসী করতে হবে। শিশু যৌন হয়রানির শিকার হলে ভয় বা সংকোচ না করে তৎক্ষণাৎ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আইনি ব্যবস্থার সুষ্ঠু ব্যবহার ও সামাজিক সচেতনতায় শিশু ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি রোধ করতে পারবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা নিষিদ্ধ করে ২০১২ সালে ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা’ জারি করে সরকার। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারেন না। তবে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারেন। তবে ওই শিক্ষার্থীদের নাম, রোল ও শ্রেণি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে জানাতে হবে। এ নীতিমালা ঢাকাসহ দেশের কোথাও মানা হচ্ছে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চুপচাপ। নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর’ (মাউশি) বসে আছে ‘হাত গুটিয়ে’। ফলে এটি এখন ‘কাগুজে নাতিমালা’য় পরিণত হয়েছে। সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানীতে স্কুল শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন শত শত কোচিং সেন্টার। সেখানে ব্যাচে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী পড়তে আসছে বেশি।
শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানী একটি উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক ঘটে কোচিংয়ে। তবে এই কোচিং বাণিজ্যের লাগাম কেন টানা যাচ্ছে না জানতে চাইলে  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপত্রের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষকের নিজের প্রতিষ্ঠানের এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের তা নির্ণয় করা খুবই কঠিন। সারাদেশে এটি দেখা, জনবলসাপেক্ষ ব্যাপার, যা মাউশির নেই। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে এখন কোচিং করার, টিউশন পড়ার তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না। আমাদের বিশ্বাস, দিনে দিনে কোচিংয়ের প্রবণতা কমে আসবে।’


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ