মোঃ রাসেল, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অপরাধ ‘চেপে রাখতে’ কেউ কেউ ‘সাংবাদিকতার’ আশ্রয় নিচ্ছেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের ‘পরিচয়পত্র’ গলায় ঝুলিয়ে রাতারাতি ‘সাংবাদিক’ বনে যাচ্ছেন তারা। সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করেন। বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও উঠছে। এ পেশার নামে অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা দেশজুড়ে। যা গত যে কোনো সময়ের তুলনায় আজকাল বেশি। এতে মূলধারার সাংবাদিকদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ তৈরি হচ্ছে। কখনো কখনো সাংবাদিকতার মর্যাদা হচ্ছে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সৎ সাংবাদিকতা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পেশাদারত্ব।
অভিজ্ঞদের মতে, সমাজে ‘সাংবাদিকদের’ গ্রহণযোগ্যতা বা বিভিন্ন স্থানে সহজ প্রবেশাধিকারের কারণে এর অপব্যবহারের প্রবণতা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানো, অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা আদায়, অপরাধ ঢাকা দেওয়া ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ‘সাংবাদিক’ পরিচয় ব্যবহার করেন অনেকে। অনেকে প্রশাসন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ‘নৈকট্য লাভের’ জন্য সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করেন। এতে প্রায় সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় প্রকৃত ও পেশাদার সাংবাদিকদের।
ভুয়া সাংবাদিকদের কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন সমাজের গণ্যমান্য সাংবাদিক সমাজ সহজে পার পাওয়া যায় বলে সাংবাদিকতার নামে প্রতারণা বাড়ছে। ডটকম ও ডটনেট বিস্ফোরণের ফলে অনেকে খুব সহজে অনলাইন পোর্টাল, ইন্টারনেট টিভি খুলে সাংবাদিকতার নামে অপকর্ম করছেন। ’সাংবাদিক’ পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন। ভোক্তভোগীদের মধ্যে সচেতনরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে ঘটনা জানাজানি হয়। ‘পরে অপদস্ত হওয়া ও সম্মানের কথা ভেবে’ অনেকে প্রতারিত হয়েও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
তারা মনে করেন, প্রেস কাউন্সিল, সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগঠনগুলোর যথাযথ দায়িত্বশীল ভূমিকার অভাব আছে। ফলে সাংবাদিকতায় কোনো অপরাধীর জড়িয়ে পড়ার সুযোগ আছে। অপকর্ম বন্ধের দায় শুধু পুলিশ প্রশাসনের একার নয়। প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বশীলতা, কঠোর নীতিমালা প্রনয়ণ হলে ‘অপরাধ’ ঢাকতে সাংবাদিকতায় আশ্রয় নেওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। অপসাংবাদিকতার অপসারণ ও সাংবাদিকতায় পেশাদারির বিকাশ না হলে সম্মানজনক অবস্থান নষ্ট হয়ে যাবে।
যারা মনে করেন প্রতারণা করে পার পাওয়া যায়, তারা একের পর এক প্রতারণা করেন। প্রতারকরা বিভিন্ন পেশাতে যুক্ত হন। যারা মনে করেন, সাংবাদিকতার পরিচয় থাকলে সহজে পার পাওয়া যায়, তারা সেটা করছেন। সাংবাদিক নামধারী অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে প্রতারণা রোধ করা সম্ভব। এ জন্য দরকার গণমাধ্যম ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ।’
তথ্যমতে, ‘সাংবাদিকতা’ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ, নজরদারি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নানা অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কয়েক প্রতারক সম্পর্কে জানা যায়, তারা বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয় পদ বাগিয়ে নিয়ে এবং অনলাইন পোর্টাল ও টেলিভিশন খুলে বিভিন্ন জনকে নিয়োগ দেন, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ‘নিউজ করে দেব’—এমন ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা নিয়ে আসেন। সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি করেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত কিছু ভুঁইফোড় সংবাদপত্র সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করার নামে কার্ড বিক্রি করে অপতৎপরতার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন অর্থের বিনিময়ে সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অসাধু চক্রের কাছ থেকে অখ্যাত পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা ও অনলাইন টিভির কার্ড নিয়ে যথেচ্ছাচার করে বেড়াচ্ছেন প্রতারকরা। তারা ‘সাংবাদিক’ সেজে মোটরসাইকেলে ‘প্রেস’ ও ‘সাংবাদিক’ লিখে বোকা বানাচ্ছেন বিভিন্ন মহলকে। ঢাকা থেকে বেশিরভাগ দৈনিক পত্রিকা নামমাত্র সংখ্যায় মাঝেমধ্যে প্রকাশ হয়। সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের জন্য সরকার নির্ধারিত রোয়েদাদ বোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও এসব ‘প্রতিষ্ঠানে’ বালাই নেই। কোনো বেতনক্রম নেই। একটি পরিচয়পত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমন ‘পরিচয়পত্রধারী সাংবাদিকদের’ সঙ্গে অপরাধ জগতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে।
তথ্য-প্রযুক্তির সহজলভ্যতার সুযোগে যে কেউ ঘরে বসে একটি সংবাদমাধ্যম খুলে বসার সুযোগ পাচ্ছেন। কোনো খরচ ছাড়া সামান্য প্রযুক্তিজ্ঞান নিয়ে ফেসবুক টিভি, ইউটিউব চ্যানেল চালু করা যায়। অল্প খরচে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করা যায়। চাইলেই যে কেউ অললাইন মিডিয়ার ‘মালিক’, ‘সম্পাদক’, ‘সাংবাদিক’, ‘রিপোর্টার’ হতে পারেন। ভুয়া সাংবাদিকদেরকে সাধারণ মানুষ সহজে চিহৃিত করতে পারেন না৷ এমনকি পেশাদার সাংবাদিকরাও মাঝেমধ্যে তাদেরকে বিভ্রান্ত হন৷ তাদের কেউ কেউ দামি গাড়িতে চলাফেরা করেন৷
লেখক:
এম রাসেল সরকার
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।