এম রাসেল সরকার: রাজধানীর খিলক্ষেত থানার কাওলা এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাব পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ঘটনার পর ডাকাতরা সাত জেলায় পালিয়ে যায়।
গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এদিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে র্যাব পরিচয়ে মাদার টেক্সটাইল নামে একটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের অপহরণ করে, তাদের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
পুলিশ জানায়, রাজধানীর উত্তরার আল আরাফা ব্যাংক থেকে ৮৩ লাখ টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন মাদার টেক্সটাইলের কর্মকর্তারা। এরমধ্যে, ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওই কোম্পানির একজন অংশীদারকে দিয়ে বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে সাদা রঙের প্রাইভেট কারে চড়ে বনানীর উদ্দেশে রওনা হন তারা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে কিছুক্ষণ চলার পর মেরুন রঙের একটি প্রাইভেট কার তাদের গাড়ি থামাতে সিগন্যাল দেয়। এরপর শুরু হয় ডাকাতদের তৎপরতা।
আজ (২২ অক্টোবর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদ। তিনি জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা গতকাল (২১ অক্টোবর) অপহরণ ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল (৩৯), মো. সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর (২৩), আবু ইউসুফ (৪১), দিদার ওরফে দিদার মুন্সী (৩৫), মো. ফেরদৌস ওয়াহীদ (৩৫), মো. আলামিন দুয়ারী ওরফে দিপু (৪২) ও মো. দাউদ হোসেন মোল্যা (৩৯)।
হারুন অর রশিদ বলেন, ডাকাতি করার পর ৭ জন মুন্সীগঞ্জ-ফেনীসহ ৭ জেলায় চলে যায়। এরপর আমাদের ডিবির ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম অভিযানে নেমে পটুয়াখালী থেকে প্রথমে শ্যামলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পর্যাক্রমে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একটু আগে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিকেল চারটার দিকে ভুক্তভোগীদের গাড়ি থামিয়ে ৪-৫ জন লোক কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তাদের গাড়িতে উঠে পড়ে। এ সময় তাদের মধ্যে র্যাবের কালো জ্যাকেট পরা দুজন ছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, র্যাবের জ্যাকেট-হ্যান্ডকাপ, ওয়্যারল্যাস এবং হুবহু অর্জিনালের মতো দেখতে খেলনা পিস্তল, ২৫-২৬টি মোবাইল ফোন, দুই ভরি স্বর্ণ এবং ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকাসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ডিবিপ্রধান।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, ডাকাতির টাকা দিয়ে তারা উকিলের পেছনে খরচ করেছেন। আবার কেউ জুয়া খেলেছেন, কেউ বাসাভাড়া দিয়েছেন। এভাবে বিভিন্নভাবে তারা খরচ করেছেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড শ্যামল ওরফে পলাশ ওরফে সবুজ। তিনি মূলত ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। আর সাগর ব্যাংকের ভেতরে থাকে। দুই-তিনদিন যাবত বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরে খেয়াল রাখে যে কোন ব্যাংক থেকে ভালো একটা অ্যামাউন্ট লেনদেন হয়। এরপর সে শ্যামলকে জানায়। শ্যামল তারপর টার্গেটকে অনুসরণ করে ডাকাতি করে। সাগরকে এর আগেও একবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৭টি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
হারুন অর রশিদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে কখনও ডিবি, কখনও পুলিশ আবার কখনও র্যাব পরিচয়ে মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করে আসছিল। ঢাকাসহ আশপাশের ১৩টি জেলায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
অপহৃত অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়ে ভুক্তভোগীরা এ ঘটনায় রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় মামলা দায়ের করেন।