শিরোনাম:
ডিবি পুলিশের হাতে জামায়াত নেতা’কে হত্যার ঘটনায় ৫ জন গ্রেফতার বেনাপোল স্থলবন্দর পরিদর্শন করলেন হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি শাহিন ফরিদপুরে যথাযথ মর্যাদায় ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর উদযাপন সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম স্মরনে গাছের চারা বিতরণ আর ডি এইচ মেকওভার এন্ড স্কিন কেয়ার সেলুন এর ৪র্থ বর্ষপূর্তি উদযাপন  বেনাপোলে গাঁজা সহ মাদক কারবারি গ্রেফতার  ফরিদপুরে যুবদল নেতা পরিচয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল পাকা স্থাপনা নির্মাণ বেনাপোলে কম্বল, শাড়ি, ফেন্সিডিল ও মদ সহ মেহেরাব পরিবহন জব্দ  সরকারের যেকোনো প্রজেক্টের পেছনে একটা সৎ উদ্দেশ্য থাকে- এসিল্যান্ড ফারজানা বিক্রমপুর প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন

চাঞ্চল্যকর বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী কামালসহ গ্রেফতার-২

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের উখিয়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী কামালসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫।

 

গ্রেফতারকৃত আসামী- কক্সবাজারের উখিয়া থানাদীন ০৪ নং রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে মোঃ কামাল উদ্দিন (৩৯) ও একই ইউনিয়নের তুতুরবিল গ্রামের নূর আলম মাইজ্জা’র ছেলে হেলাল উদ্দিন (২৭)।

 

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, এই চক্রের অধীনে প্রায় ১০/১২ টি ডাম্পার ও কয়েকটি মাটিকাটা ড্রেজার রয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে বন কর্মকর্তাদের অগোচরে পাহাড়ের মাটি কেটে এনে প্রতি ডাম্পার ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিভিন্ন লোকজনের নিকট জমি ভরাট করার জন্য বিক্রি করে থাকে। চক্রের মূল হোতারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রেখে বাকি টাকা ডাম্পারের মালিকদের গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ পরিশোধ করে দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা আরো জানায় যে, বন কর্মকর্তাদের আগমন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে এই চক্রের লোকদেরকে নিয়োগ করে রাখা হতো।

 

নিহত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হরিণমারা বন অঞ্চলের দায়িত্বপূর্ণ বিট কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি একজন সাহসী ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে সর্ব মহলে পরিচিত ছিলেন। বন বিভাগের তথ্য মতে, গত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করে পাঁচটি মাটি কাটার ড্রেজারসহ কয়েকটি ডাম্পার আটক করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে বন আইনে কয়েকটি মামলা দায়ের করেছেন। যার ফলে এই বন কর্মকর্তা এই অপরাধী চক্রের চক্ষুশূলে পরিণত হন এবং অপরাধীরা তাকে শায়েস্তা করার জন্য নানান পরিকল্পনা করে থাকে।

গত ২৯ শে মার্চ বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ তার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বন বিভাগের আরও কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ের মাটি বোঝাই করা অবস্থায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালের একটি ডাম্পার আটক করেন এবং এই ঘটনায় কামালসহ চারজনের বিরুদ্ধে বন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ফলে কামালসহ অন্যান্য আসামীরা বন কর্মকর্তা সাজ্জাদের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। স্থানীয় লোকদের সূত্রমতে জানা যায় যে, ঘটনার আগের দিন কামাল, হেলাল, সৈয়দ আলমসহ এ চক্র আরো কয়েকজন বন কর্মকর্তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।

 

গ্রেফতারকৃত আসামি ও স্থানীয় লোকদের তথ্য মতে জানা যায় যে, গত ৩১ মার্চ রাত আনুমানিক ২টার সময় সময় ঘাতক বাপ্পি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালসহ দুইজন হেল্পার’কে সাথে করে সৈয়দ আলমের মালিকানাধীন একটি ডাম্পার নিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটার উদ্দেশ্যে বের হন। ডাম্পারের মালিক সৈয়দ আলম বন কর্মকর্তাদের আগমনের উপর নজরদারি রাখার জন্য একটি বাজারে অপেক্ষা করতে থাকে। ইতোমধ্যে পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে সাহসী বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ বন বিভাগের আরেক সদস্য মোঃ আলীকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাপ্পি ও কামাল মাটি বোঝাই ডাম্পার নিয়ে ফেরত আসার সময় স্থানীয় ফরিদ আহম্মদের দোকানের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদকে আসতে দেখে। তখন ডাম্পারের ড্রাইভার বাপ্পির পাশে বসে থাকা কামাল পূর্ববর্তী ঘটনার আক্রোশের জেরে এবং পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গাড়ি না থামিয়ে বন কর্মকর্তাকে গাড়ি চাপা দেওয়ার জন্য বাপ্পীকে নির্দেশ প্রদান করে। ঘাতক বাপ্পি গাড়ি না থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও তার সহযোগীকে গাড়ি চাপা দেয়। ফলে ড্রাম্পারের চাপায় মাথায় গুরতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ মৃত্যুবরণ করেন এবং সাথে থাকা সহযোগী মোহাম্মদ আলী আহত হন। বর্ণিত হত্যাকান্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ফেসবুকসহ স্থানীয় এবং জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একই সাথে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতার ও হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী ফাঁসিয়াখালীতে মানববন্ধন করেন।

 

পরবর্তীতে গত ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখে এ ঘটনায় দক্ষিন বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: শফিউল আলম বাদী হয়ে এজহারনামীয় ১০ জন এবং অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়া মাত্রই র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ১৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ আনুমানিক দুপুর সাড়ে ৪টার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজারের একটি চৌকস আভিযানিক দল পৃথক স্থান হতে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ কামাল’কে চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড হতে এবং হত্যার সহযোগী হেলাল’কে কক্সবাজার উখিয়া কোটবাজার এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদ্বয় মোঃ কামাল ও হেলাল উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিল মর্মে স্বীকার করে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ