কুরবান গাজী, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোলের সাথে ভারতের বানিজ্যিক শহর কোলকাতার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় দেশের সিংহভাগ পাসপোর্ট যাত্রী এপথেই যাতায়াত করে থাকেন। সেই সাথে ইমিগ্রেশনের কর্মরত রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মোকলেছুর রহমান ও হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে চোরাচালান বন্ধ সহ ল্যাগেজ বাণিজ্য প্রায় শুন্যের কোঠায় নামিয়েছেন । আর এতে করে বেনাপোল বন্দরে বেড়েছে আমদানিতে রাজস্ব আয় ।
বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমস-ইমিগ্রেশনে দক্ষ কর্মকর্তারা দায়িত্ব থাকার ফলে বহিঃর্গমন ও আন্তগমন পাসপোর্ট যাত্রীদের সেবার মান দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মকর্তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তল্লাশির কারনে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন মাসে ২৫২৪টি পন্য আটক ব্যবস্থাপনা (ডিএম) করে মামলা দেওয়া সহ সাড়ে উনিশ লক্ষ টাকার স্পট ট্যাক্স আদায় হয়েছে। ব্যাগেজরুল মানার কারনে সাধারন যাত্রীরা দীর্ঘ লাইন বাদে দ্রুত সময়ে নির্বিঘ্নে কাস্টমসের কাজ শেষ করে বের হতে পারছেন। পাসপোর্ট যাত্রীদের ব্যাগেজ রুল অনুযায়ি কাংঙ্খিত সেবা দিতে সারিবদ্ধভাবে পাসপোর্ট যাত্রীদের স্কানিংয়ে ল্যাগেজ এবং যাত্রীদের হ্যান্ড মেটেল ডিটেক্টর দিয়ে শরীর তল্লাশি করা হচ্ছে। ভারত হতে আগত যাত্রীরা ব্যাগেজ রুল অনুযায়ি বেশি পণ্য আনলে তাদের পণ্য সরাসরি (আটক ব্যবস্থাপনা) ডিএম করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানান এভাবে যাত্রীদের তল্লাশির ফলে লাগেজ পার্টির দৌরাত্ম্য কমেছে এবং রাজস্ব আয় দ্বিগুন হচ্ছে। গত ৮ই নভেম্বর ইমিগ্রেশন থেকে ৬৯৫ গ্রাম স্বর্ণ সহ ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রী আটক করা হয়। আটক স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৭২লক্ষ ১৬ হাজার টাকা।
সরজমিনে বেনাপোল কাস্টমস ইমিগ্রেশন ঘুরে দেখা গেছে, ভারত হতে আগত যাত্রীদের ল্যাগেজ স্ক্যানিং চেক করার পর সন্দেহভাজন পুরুষ যাত্রীদের তল্লাশি এবং নারী যাত্রীদের আলাদা গোপন রুমে নিয়ে তল্লাশি করছেন। পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থেকে আমদানি নিষিদ্ধ এবং অবৈধ পণ্য থাকলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তল্লাশি করছে যাতে কেউ গোপনে কোন ভাবেই অবৈধ পণ্য নিয়ে ভারত গমন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত ১ম শিফটে ডিউটি করছেন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা নাঈম উদ্দীন, দিদারুল আলম ফারুকী সহ নূরে আলম এবং ২য় শিফটে ডিউটি করছেন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা আবু ইউসুফ, সাবেরা শারমিন, সুমনা হক এ্যানি, শহীদুল্লাহ।
এসব কর্মকর্তারা পাসপোর্ট যাত্রিদের হয়রানি ছাড়ায় যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কোন চোরাচালানি পণ্য যাতে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে এবং ভারত থেকে কোন পণ্য দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য অত্যন্ত সততা, নিষ্টা ও সতর্কতার সাথে কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
খুলনার এক পাসপোর্ট (বি-০০১৫১৩২০) যাত্রী মারিয়া বেগমের নিকট ইমিগ্রেশন কাস্টমসে তল্লাশিতে কোন সমস্যা করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসারদের ব্যবহারে খুবই মুগ্ধ হয়েছি কোন রকম হয়রানি ছাড়ায় শুধু মাত্র ব্যাগেজ স্ক্যানিং করে সু-শৃঙ্খলভাবে কাস্টমসের কাজ শেষ করেছি। তিনি আরও জানান বাড়ির ব্যবহারের জন্য খাদ্যদ্রব্য সহ হাড়িপাতিল কিনেছেন কিন্তু অফিসাররা চেক করে ছেড়ে দিয়েছেন।
সাতক্ষিরার আরও এক পাসপোর্ট (এ-০৬১০৮০০৪) যাত্রী দুলাল চন্দ্র ঘোষের কাছে কাস্টমস ইমিগ্রেশন তল্লাশিতে কোন হয়রানি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ও আমার পরিবারের ২ জন এই প্রথম ভিসা নিয়ে ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বেনাপোল কাস্টমস ইমিগ্রেশন দিয়ে সহজে পারাপার হওয়া যায় এজন্য সাতক্ষীরা ঘোজাডাংঙ্গা বর্ডার দিয়ে না গিয়ে বেনাপোল দিয়ে বের হয়েছি। দায়িত্বরত কাস্টমস অফিসাররা আমাদের সাথে থাকা পরিবারের জন্য ক্রয় কৃত মালামাল স্ক্যানিং করে ছেড়ে দেন। কিন্তু সাথে দুই কেজি দুধ ছিলো তা রেখে ডিএম করে দিয়েছেন। এছাড়া কোন রকম ঝামেলা ও হয়রানি ছাড়ায় অতি দ্রুত কাস্টমসের সেবা পেয়েছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল ইমিগ্রেশনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পণ্যর রাজস্ব ফাঁকি দিতে বাংলাদেশ এবং ভারতের দুপাশে বড় ল্যাগেজ সিন্ডিকেট রয়েছে। কিন্তু বর্তমান ল্যাগেজ যাত্রী শূন্যের কোঠায় নেমেছে। সকাল এবং বিকাল দুই সময়ে দুজন করে ননটেকার অফিসার থাকার কারনে কোন রকম সুযোগ নিতে পারছেননা ল্যাগেজ ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল কাস্টমস ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবনের নিরাপত্তা ও পাসপোর্ট যাত্রীদের হয়রানি বন্ধে ২৭টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে অবৈধভাবে পন্য পারাপার ও চোরাচালানের কোন সুযোগ নাই। ব্যাগেজ রুল ব্যতিত ভারত থেকে বেশি পণ্য নিয়ে আসলে তাদের পণ্য ডিএম করে সরকারের রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে।