এস এম মারুফ, ক্রাইম রিপোর্টারঃ যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন চুরিপট্টি এলাকায় গত (৯ নভেম্বর) রাত ৮টার সময় কিছু অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা ভিকটিম রাজিম (১৭)কে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করে সন্ত্রাসীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
উক্ত হত্যাকান্ডের বিষয়ে ভিকটিমের বাবা শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বাদী হয়ে যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উক্ত ঘটনাটি যশোর শহরের জনবহুল একটি স্থানে ঘটায় জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনার বিষয়ে র্যাব-৬, যশোর সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায় এবং ঘটনার সাথে জড়িত হত্যাকারীদের চিহ্নিত পূর্বক গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে এবং ঘটনাস্থলের উক্ত সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যার সাথে জড়িত আসামীদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকার মোঃ ইয়াছিন বিশ্বাসের ছেলে মোঃ পায়েল (১৯), একই এলাকার মোঃ রুস্তম গাজীর ছেলে শিমুল গাজী (২৫), মোঃ রইচ উদ্দিনের ছেলে রায়হান ও মোঃ বিপ্লব চাকমা বিপ্লবেরে ছেলে ইয়ামিন (১৯) এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সন্ত্রাসীরা ভিকটিম রাজিমকে একাধিকবার এলোপাতাড়ি ছূরিকাঘাত করছে। সিসিটিভি ফুটেজ হতে চিহ্নিত হত্যাকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্পের একাধিক আভিযানিক দল মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে।
র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্প শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটের সময় গোপন সূত্র ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে চাঞ্চল্যকর রাজিম হত্যা মামলার অন্যতম আসামী মোঃ পায়েল যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকায় আত্মগোপনে আছে। প্রাপ্ত তথ্যোর ভিত্তিতে উক্তস্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ পায়েল (১৯), পিতা-মোঃ ইয়াছিন বিশ্বাস, সাং- বারান্দি মোল্লাপাড়া, থানা- কোতয়ালী মডেল, জেলা- যশোরকে গ্রেফতার করে।
অপরদিকে র্যাব-৬, যশোর এর পৃথক আভিযানিক দল গোপন সূত্র ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যশোর জেলার ডোপ পট্টি চিত্রার মোড় এলাকা হতে একই তারিখ রাত ১১টা ৫০ মিনিটের সময় অপর আসামী মোঃ শিমুল গাজী (২৫), পিতা- মোঃ রুস্তম গাজী, সাং- বারান্দি মোল্লাপাড়া, থানা- কোতয়ালী মডেল, জেলা- যশোরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ পায়েল (১৯)’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং সে জানায় যে, ভিকটিম রাজিম তাদের পূর্ব পরিচিত এবং ভিকটিম রাজিম যশোর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীতে পড়তো এবং তারা একই কলেজের নবম শ্রেণীতে পড়তো। প্রায় এক মাস পূর্বে সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া তাদের বন্ধু মোঃ ইয়ামিন (১৯)’কে ভিকটিম রাজিম সহ তার অন্যান্য বন্ধুরা মিলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছুরিকাঘাত করে গুরুত্বর আহত করে। এ বিষয়ে তাদের পরিবার কর্তৃক মিমাংসা করে দিলেও তাদের মধ্যে প্রতিহিংসা রয়ে যায় এবং সুযোগ খুঁজতে থাকে রাজিম ও তার বন্ধুদের মেরে প্রতিশোধ নিবে।
ভিকটিম রাজিম (১৭) যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন শহরতলী ঝুমঝুমপুর এলাকার বাদল খানের ছেলে। লেখাপড়ার পাশাপাশি যশোর শহরের বড় বাজারের একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। আসামী পায়েল (১৯) ও শিমুল গাজী (২৫) সহ অন্যান্য আসামীরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে যশোর শহরের চুড়িপট্টি এলাকায় একত্রিত হয় এবং তারা কৌশলে ভিকটিমকে তার কর্মস্থল শাড়ির দোকান থেকে কিছু দূরে পানের দোকানের সামনে ডেকে নিয়ে হঠাৎ করে সকলে মিলে আক্রমণ করে। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভিকটিম রাজিম নিজেকে বাঁচানোর জন্য দৌড়ে পালাচ্ছে এবং আসামী পায়েল তাকে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করছে। ভিকটিম রক্তাক্ত জখম অবস্থায় পালাতে চেষ্টা করে দৌড়ে একটি মুরগীর দোকানের সামনে এসে পড়ে যায়। সেসময় আসামীরা তাকে সেখানে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল হতে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পরবর্তী আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।