বিশেষ প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারীসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এ ঘটনার জেরে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী পৌর সদরে অবস্থিত ‘বোয়ালমারী জর্জ একাডেমী’র প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যাকে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ৩০ জুলাই প্রথমবার এবং ১৪ আগস্ট দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তার কোন জবাব দেন নাই। পরবর্তীতে গত ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্তের ওই সিদ্ধান্ত গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হয় বলে অভিযোগে প্রকাশ।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশে আনীত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- নারী কেলেংকারী, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ, অর্থ আত্মসাৎ, বিনা ছুটিতে বিদ্যালয় ত্যাগ, বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব না দেয়া।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বোয়ালমারী জর্জ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যা চতুল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থাকাকালীন ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়টি হাতেনাতে প্রমাণিত হওয়ার পর কোন কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়া পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
এদিকে, বোয়ালমারী জর্জ একাডেমীর ম্যানেজিং কমিটি নিজের মনের মতো না হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভা না ডেকে প্রধান শিক্ষক কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ।
বিষয়টি অভিযোগ আকারে ঢাকা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানালে বোর্ডের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক তদন্তপূর্বক প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
সভাপতি প্রদত্ত অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় যথাক্রমে ৪০০ ও ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। যা বোর্ড নির্ধারিত ফির অনেক বেশি। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটি জানতে পেরে বোর্ড নির্ধারিত ফি নিতে বললে প্রধান শিক্ষক তাতে ভ্রূক্ষেপ করছে না। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে পরিচয়পত্র বানানোর নামেও প্রধান শিক্ষক লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যা বলেন, আমাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অবৈধ। কারণ তাদের দাবিকৃত দুইটি নোটিশ আমি হাতে পাইনি। বিদ্যালয়ের বাইরে বসে রেজ্যুলেশন করে নোটিশ তারা নিজেদের হাতেই রেখেছেন। একবারে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের চিঠি আমার হাতে পৌঁছানো হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মনগড়া।
নারী কেলেংকারীর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চতুল হাইস্কুলের চেয়ে অধিক মানসম্পন্ন কাদিরদী উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরির সুবাদে আমি চতুল স্কুলের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেই। চতুল চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার বিষয়টা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
নবম ও দশম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি নেয়ার ব্যাপারে প্রধান সদ্য বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক বলেন, বেশি টাকা নেয়ায় আমার ব্যক্তিগত কোন লাভ নেই। টাকা যেহেতু ব্যাংকে জমা হয়, সেহেতু অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা।
আইডি কার্ড বানানো বাবদ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সম্মানিত তিনজন সদস্য ফরিদপুরের বিভিন্ন ছাপা খানায় যাচাই-বাছাই করে টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করেন এবং শ্রেণি শিক্ষক টাকা আদায় করে সম্মানিত সদস্যদের উপস্থিতিতে নির্বিচিত ছাপা খানার প্রতিনিধির হাতে টাকা হস্তান্তর করেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, বিভিন্ন অপরাধে চাকরি বিধিমালা ১৯৭৯ এর ৩৮ (চ) ধারামতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।