এমএম জামান, বোয়ালমারী (ফরিদপুর): প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আ’লীগ, যুবলীগ নেতাদের বাধা উপেক্ষা করে দুর্গাপূজার আয়োজন করায় মন্দির কমিটি সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যদের মারধর, বাড়ি-ঘরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার (১৩ অক্টোবর ) রাতে বোয়ালমারী পৌরসভাধীন আধারকোঠা এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, বরাবরের ন্যায় এবারও আধারকোঠা শ্রী শ্রী রক্ষা চণ্ডী মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটি। কিন্তু শুরুতেই এবার পূজা আয়োজন না করার জন্য মন্দির কমিটির উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সচিন রাজবংশী, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা নিঠুর রাজবংশীসহ আওয়ামী পন্থী একাধিক সদস্য। তারা মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ কে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এবার দেশের পরিস্থিতি ভালো না, এদেশে আমরা বসবাস করতে পারি কিনা সন্দেহ। এমন পরিস্থিতিতে পূজার আয়োজন না করলে হিন্দু সম্প্রদায় রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তাই এবার মন্দিরে পূজার আয়োজন করা যাবে না। চক্রান্তের এমন খবর পৌঁছে যায় স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের কানে। পরে পৌর বিএনপি নেতা মোঃ ইমরান হোসাইনের হস্তক্ষেপে ষড়যন্ত্রকারীদের সব বাঁধা উপেক্ষা করে মন্দিরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকারসহ কমিটির সংখ্যা গরিষ্ঠ একটি অংশ।
এতে ব্যাপক ক্ষুদ্ধ ও অসন্তুষ্ট হয় বাঁধাদানকারীরা। এর জের ধরে তারা কেবল পূজার চাঁদা দেয়া থেকেই বিরত থাকে না সেই সাথে পূজা বিসর্জন কালে মদ খেয়ে পরিকল্পিত ভাবে হট্টগোল বাঁধানোর চেষ্টা করে। তারা বিকট শব্দে আতশবাজি ফুটিয়ে নারী দর্শনার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করতে থাকলে পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুভাষ রাজবংশী, কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা তাতে বাধা প্রদান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত সচিন রাজবংশী, নিঠুর রাজবংশী, রিমন রাজবংশী, পলাশ রাজবংশী, বিনয় রাজবংশীর নেতৃত্বে আরো প্রায় ১০/১২ জন সুভাষ রাজবংশীকে বেধড়ক মারধর করে। লাঞ্ছিত করে আনসার সদস্যদের। এক পর্যায়ে বিবাদীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে গেলেও রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটায় তারা এবার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকারের বাসভবনে হামলা চালায়। দুষ্কৃতকারীরা ভারী অস্ত্র দিয়ে ঘরের দরজা-জানালা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করে। বিশ্বজিৎ বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী শিল্পী সরকার, মেয়ে প্রার্থনা সরকারকে বিবাদীরা মারধর করে বলে এজাহারে প্রকাশ।
এ ঘটনায় পরের দিন ১৪ অক্টোবর বোয়ালমারী থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন পূজা কমিটির সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার। সভাপতির এজাহারে মোট আসামী ৭ জন। এখানে প্রধান করা হয়েছে শচীন রাজবংশীকে। সাধারণ সম্পাদকের এজাহারে নামাঙ্কিত আসামী ৯ জন। এখানে নিঠুর রাজবংশীকে প্রধান করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনকে আসামী করা হয়েছে।
জানতে চাইলে এজাহারের দুই বাদী গণমাধ্যমকে বলেন, অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শচিন গং আমাদেরকে পূজা আয়োজনে বিরত থাকতে বলে। আমরা তাদের কথায় সায় দেইনি। এই অপরাধে তারা পূজা বিসর্জন ঘাটে হট্টগোল বাঁধায়। মদ খেয়ে, বিকট শব্দের আতশবাজি ফুটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। কোষাধ্যক্ষকে মারধর করে তার কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি হামলা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নিঠুর রাজবংশী বলেন, আর্থিক সংকট, মন্দিরের আভ্যন্তরীণ অনেক সমস্যার কারণে কমিটির অনেকেই পূজায় আগ্রহী ছিলেন না। প্রতিমা বিসর্জন কালে আনন্দ-ফূর্তি করতে গিয়ে কিছু পোলাপান একটু বেশী হৈ-চৈ করছে বলে শুনেছি। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।
বিএনপি নেতা মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, পূজা আয়োজনে আপত্তির কথা জেনে দু’পক্ষকে নিয়ে বসে ছিলাম। সমঝোতায় মন্দির কমিটির আওয়ামী পন্থী সদস্যরা পূজা আয়োজনে সম্মত হলেও পরে চাঁদা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এসব নিয়ে ঝামেলার জেরে বিশৃঙ্খলা, মারধর, হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ গোলাম রসূল বলেন, দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।