এম রাসেল সরকার: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, প্রখ্যাত আইনজীবী, দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকার প্রকাশক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংস্থার মহানগর কমিটির উদ্যোগকে দোয়া ও মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: মমিনুর রশিদ শাইন, সাংগঠনিক সচিব মো: রাসেল সরকার, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবুল বাসার মজুমদার, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব ব্বাপি আহমেদ শ্রাবণ, অর্থ সম্পাদক আবেদ আলী, সংস্থার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি আহমেদ আলী।
আরও উপস্থিতি ছিলেন এডভোকেট আব্দুল মান্নান মিলন, আমির আলী, মনিরুজ্জামান, সুবহান মাতাব্বর, ষোলআনা বাঙালির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শিখর সহ সংস্থার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
দোয়া ও মোনাজাত করেন হাফেজ মো: তানভীর আহমেদ এবং দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে উক্ত অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
গত বছর এই দিনে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সর্বমহলে সুপরিচিত ও শ্রদ্ধাভাজন এই ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান ঘটেছিল ৮৩ বছর বয়সে। সদা হাস্যোজ্জ্বল, সদালাপি, অমায়িক, বিনয়ী, বন্ধুবৎসল আর প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর সাদা মনের মানুষ ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন হিরু। তার মৃত্যুতে সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। জানাজায় বিভিন্ন মহলের অসংখ্য ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। মা মাজেদা বেগম ও পিতা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার কবরের পাশে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আইন-অঙ্গন, সাংবাদিকতা, রাজনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ছিলেন একজন স্বনামখ্যাত ব্যক্তিত্ব। দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
অন্যায়-অবিচার-সামাজিক অসংগতি, নিবর্তনের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ও প্রতিবাদী ছিলেন তিনি। সৎ-উদার, গণতন্ত্রমনা, দেশপ্রেমিক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসংকোচে সত্য প্রকাশে ছিলেন নির্ভীক। এজন্য তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে। জাতির ক্রান্তিকালে-দুঃসময়ে-গণতন্ত্রের সংকটে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং কণ্ঠস্বর অব্যয়-অক্ষয় হয়ে থাকবে অনন্তকাল।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন স্বাধীনতা-উত্তরকালে ১৯৭৩ সালে পিতৃভূমি পিরোজপুর থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থার প্রচলন করা হলে তিনি পার্লামেন্ট থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে আলোচনার পাদপ্রদীপে উঠে আসেন। ২০০৭ সালে গঠিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন দক্ষতার সঙ্গে।
আপন কর্মক্ষেত্রে নিরলস কর্মনিষ্ঠ কীর্তিমান ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অন্য যে কোনো পরিচয়ের চাইতে নিজেকে আইনজীবী হিসেবেই দেখতে পছন্দ করতেন। ‘স্বাধীন ও শক্তিশালী সংবাদপত্র ব্যতীত কোনো ন্যায়ভিত্তিক, নিরাপদ সমাজ গড়ে উঠতে পারে না’—এই প্রত্যয় নিয়েই তিনি সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০০-২০০১ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য। শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণে আইনাঙ্গনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই সিনিয়র আইনজীবীর বলিষ্ঠ ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিভিন্ন সাংবিধানিক মামলায় আদালতের আহ্বানে ‘অ্যামিকাস কিউরি’ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মত তুলে ধরেন তিনি। অসংখ্য আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলাও পরিচালনা করেছেন তিনি।