প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ৮, ২০২৪, ৮:৫৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ৮:৪২ অপরাহ্ণ
দেবিদ্বারে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ গ্রেফতার
বিশেষ প্রতিনিধি: ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে দেবীদ্বার পৌর এলাকার ছোট আলমপুর গ্রামের ‘উম্মে ফয়েজ তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা’য়।
ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমান(৪০) কর্তৃক তারই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক (১৪) শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ) ভোরে পুলিশ আটক করে এবং শনিবার বেলা ২টায় কুমিল্লা কোর্ট হাজতে চালান করেছে।
আটক অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমান দেবীদ্বার পৌর এলাকার ইকরা নগরীর দারোগাবাড়ির মৃত: মাওলানা হাফেজ খলিলুর রহমানের পুত্র। তিনি ২০১৪ ইং সনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামি আন্দোলন থেকে ‘পাখা মার্কা’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করেছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি ৩ পুত্র সন্তান ও ১ কণ্যা সন্তানের জনক।
ওই ঘটনায় ভিক্টিমের বাবা বাদী হয়ে দেবীদ্বার থানায় শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ) অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমানকে এক মাত্র আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলে পুলিশ ‘উম্মে ফয়েজ তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা’ ভবন থেকে তাকে আটক করে শনিবার বেলা ২টায় কুমিল্লা কোর্ট হাজতে চালান করা হয়। অপরদিকে কুমেক হাসপাতালে ভিক্টিমের ডাক্তারী পরীক্ষা এবং আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ২২ ধরায় জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়।
ভিক্টিম ও তার স্বজনরা জানান, ভিক্টিমের পিতা- মাতার বিচ্ছেদ হয় প্রায় ১২ বছর পূর্বে। সেই থেকে ভিক্টিম তার দাদীর কাছেই বড় হয়। পৌর এলাকার ছোট আলমপুর গ্রামে ভিক্টিমের চাচার ভাড়া বাসায় থেকে সে ওই মাদ্রাসায় লেখা পড়া করছিল। হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমান দির্ঘদিন যাবৎ তাকে বিভিন্ন প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি ভিক্টিম তার দাদীসহ পরিবারের লোকদের নিকট প্রকাশ করলে, এ ঘটনার বিচারের দাবী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৩। ‘উম্মে ফয়েজ তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা’, ‘উম্মে ফয়েজ তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা’সহ একাধিক নামে তার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছোট আলমপুর গ্রামের এক ব্যবসায়ি জানান, দেবীদ্বার পৌর এলাকাতেই শতাধিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিভিন্ন ভবনে বাসা ভাড়া নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কোথাও প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোথাও বা মহিলা মাদ্রাসা, হাফেজিয়া মাদ্রাসা। এসব মাদ্রাসার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতারাই শিক্ষক, অধ্যক্ষ বা মোহতামিন থাকেন। আর এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারের লোকজন তাদের সন্তানদের নিরাপদ মনে করে ধর্মীয় শিক্ষার্জনে পাঠান। প্রায়ই শিশু-কিশোর-কিশোরীরা বলৎকার ও যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
অমানবিক নির্যাতনে কেউ কেউ মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যেয়ে বখে যাচ্ছে। এসকল ভ‚ঁইফোর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দ্বিনী শিক্ষার নামে অনৈতিক কর্মকান্ড রোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনেরও কোন নজরধারী নেই। প্রতিবাদ করলে কিংবা বিচার চাইলে একশ্রেণীর প্রভাবশালীরা ধর্মের বিরুদ্ধে বা আলেমের বিরুদ্ধাচারণ করার দাবী তুলে উল্টো হেনস্থা হতে হয়।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমান এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন, এসব অভিযোগ আমাকে এবং আমার প্রতিষ্ঠানকে হেয় করতে কোন বিশেষ মহলের য়ড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাইনুল হোসেন জানান, ভিক্টিমের বাবার অভিযোগে মামলা হয়েছে, আসামী গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করা হয়েছে। ভিক্টিমের ডাক্তারী পরীক্ষা ও ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ২২ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা তদান্তাধিন।
Copyright © 2024 samajerchoke.com. All rights reserved.