বিশেষ প্রতিনিধিঃ দেশের আর্থিক খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য দেশে আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার। আর পিকে হালদার সিন্ডিকেটে যারা জড়িত এবার ফাঁসছেন তারা। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৪০ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কমিশন সভায় অনুমোদনের পর তালিকাটি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান রবিবার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেছেন।
জানা গেছে, গোয়েন্দারা পিকে হালদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অনেক ব্যক্তির নাম জেনেছেন। তারা বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে অনুসন্ধান দলের কাছে জমা দিয়েছে। এদের কেউ কেউ দেশত্যাগ করে অন্যত্র পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নিউট্রিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিসেস অনামিকা মলিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহানন্দ তরুয়া, লিপরো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, পরিচালক রচনা মন্ডল, কনিকা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার রামপ্রসাদ রায়, দ্রিনান অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর মালিক ইমাম হোসেন, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা। অন্যরা হলেন- আর্থস্কোপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন, পরিচালক সুভ্রা রানী ঘোষ, আরবি এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি, বাসুদেব ব্যানার্জি, নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুজ্জামান, এমএ হাশেম, মোহাম্মদ আবুল হাসেম, জহিরুল আলম, নওশেরুল ইসলাম ও মমতাজ বেগম। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন শ’ওয়ালেস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আলম, রাহমান কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক রাজিব সোম এবং মুন এন্টারপ্রাইজের মালিক শঙ্খ ব্যাপারী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এই মামলায় পিকে হালদারকে ২২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এর আগে দুই দফায় পিকে হালদারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের আরও ৩৫টি মামলা করেছে সংস্থটি। এর মধ্যে অন্তত তিনটি মামলার রেফারেন্সে উল্লিখিত ব্যক্তিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আর আর্থিক খাত থেকে আত্মীয়স্বজন চক্রের মাধ্যমে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি সরানোর অভিযোগ নিয়ে রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা তদন্ত করে এরই মধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্ত সংস্থার অনুরোধেই ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা পশ্চিমবঙ্গে অভিযান চালিয়ে পিকে হালদার, তার ভাই প্রীতিশ হালদারসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে সেখানেই কারাবন্দি আছেন তারা।